বাংলাদেশিরা আমেরিকান মূল ধারায় আসবে --- প্রফেসর হ্যাঁনা গরডন
সমাজে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা নিজেরা যেমন হন আপন আলোয় আলোকিত, তেমনি সেই আলোর ঝলকানিতে উজ্জ্বল করে তোলেন তাঁদের আশেপাশের মানুষদের। তাঁদের সততা, নিষ্ঠা, আর মহানুভবতায় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় সারা বিশ্ব। তাদের সৃজনশীলতার চরম উৎকর্ষতা—ই হয় তাদের পরিচায়ক। তাদের ব্যতিক্রমী কর্মপন্থা হয় সকলের জন্য আদর্শ। তাঁরা অভাবনীয় জীবনীশক্তি আর সংকল্পরত শক্তিশালী মানুসিকতার সমন্বয়ে পরিণত হন সকলের প্রিয় মানুষে। তেমনি এক বীর নারীর কথা বলব আজ। তিনি হলেন নিউ ইয়র্ক সিটি কলেজ অফ টেকনোলজি’র ইংরেজীর অধ্যাপক মিস হ্যানাহ গরডোন।
চল্লিশের দশকে বর্বরোচিত নাৎসি বাহিনীর ভয়ানক তান্ডবের শিকার তার বাবা, মা, এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। “আমার মা বাবা এবং অন্যান্য চাচাচাচী এবং চাচাতো ভাই-বোনেদের সবাই নাৎসি বাহিনীর জারিকৃত অমানবিক আইনের ফলে স্কুল এবং কলেজে যাওয়া থেকে নিষিদ্ধ ছিল”, তিনি বলেন। কিন্তু মিস গরডোনের মজবুত মানুসিকতা থেকে তার বাবা—মায়ের চিত্তের পরিচয় পাওয়া যায়। সহজে হাল ছেড়ে দেবার লোক ছিলেন না তারা। গরডোনের বাবা মা জন্মস্থান পোল্যান্ড ছেড়ে চলে আসেন কানাডায়। এরপর বিভিন্ন স্থানে কাজের মাধ্যমে তার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল অবস্থায় ফিরে আসতে লাগলেন। তারা তাদের অনাগত সন্তানের জন্য টাকা-পয়সা জমাতে শুরু করলেন।
মিস গরডোন জন্ম গ্রহণ করেন নিউ জার্সির ফ্রিহোল্ড সিটিতে। এরপর তিনি স্থানীয় হাইস্কুল শেষ করে ভর্তি হন নিউ জার্সির মনক্লের স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে সাহিত্যে এবং ইতিহাসে মাস্টার্স এবং পরবর্তিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
“আমি মনে করি, যে বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হল, আমি শুনেছি আমার বাবা যখন কানাডাতে প্রথম এসে কাজ শুরু করলেন, তখন কাজের মাঝে তিনি দুপুরের খাবারের জন্য যে সময় পেতেন, তখন তিনি দোকানের পেছনের কোন স্থানে গিয়ে নীরবে একা একা বই পড়তেন আর এভাবেই তিনি নিজে নিজে লিখতে এবং পড়তে শিখেছেন।” আপনি কেন শিক্ষকতাকে আপনার পেশা হিসেবে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে আমরা চার ভাই—বোনের মধ্যে দুই জন ইতিহাসে পড়েছিলেন, ফলে আমিও সে বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম, সাথে আমার ইংরেজী ব্যাকরণের পারদর্শিতাই আমাকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমি আজ ৩০ বছর যাবত শিক্ষকতা করছি ফলে সত্যি বলতে, আমি ভুলে গেছি কিভাবে এ পথে এসেছিলাম।”
মিস গরডোন একজন ব্যতিক্রমী শিক্ষক। তাঁর ব্যাতিক্রমী পাঠ দান পদ্ধতি তাকে অন্য সব অধ্যাপক থেকে আলাদা পরিচয়ে পরিচিত করে। যেহেতু তিনি রাইটিং এর অধ্যাপক, তিনি তার ছাত্রছাত্রীদেরকে গতানুগতিকভাবে কোন বিষয় নির্ধারণ না করে দিয়ে যেকোন বিষয়ে লেখার অনুমতি দেন। ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের লেখনীধারাকে ত্বরাণ্বিত করতে পারে। আশ্চর্য্যজনকভাবে, তিনি পাঠদানকালে যদি ভুলবশতঃ কিছু লিখে ফেলেন বা কোন কিছু করেন, তিনি নিজেকে এক ডলার জরিমানা করেন। “আর সেই টাকা আমি ছাত্রছাত্রীদেরকে আটলান্টিক সিটিতে বিনোদনের জন্য খরচ করতে দিই না, বরং সেই টাকা দিয়ে আমি তাদের জন্য লেখাপড়া সহায়ক বিভিন্ন বস্তুু যেমন ঈনডেক্স কার্ড, কলম, বই ইত্যাদি দিয়ে থাকি”, তিনি বলেন। তার প্রদত্ত গ্রেডে যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী সন্তুষ্ট না হয় তবে তিনি ছাত্র-ছাত্রীকে অন্য সব শিক্ষার্থীদের জন্য সেই পেপারের একটি করে কপি আনতে বলেন এবং সবাই মিলে আবার গ্রেডিং করার সুযোগ দেন।“আমি যদি কাউকে সে গ্রেড দিই এবং ক্লাস যদি তাকে এফ গ্রেড দেয় তবে আমার দেওয়া সি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। অপর পক্ষে, আমি যদি কাউকে সি দিই এবং ক্লাস তাকে এ দেয়, তবে সেই এ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সব সময় সর্বোচ্চ গ্রেডকে আমি প্রাধান্য দিই।”
আদর্শ শিক্ষাদানকে কিভাবে সঙ্গায়িত করা যায়? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষক সরাসরি কিছু না শিখিয়ে বরং বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীকে নিজে থেকে শেখার ব্যবস্থা করা হল সবচেয়ে ভালো শিক্ষাদান পদ্ধতি। আমি কিন্তু আসলে কাউকেই কিছু সরাসরি শেখায় না। কারণ আমি মনে করি শিক্ষা দেওয়া এবং শিক্ষা নেওয়া এ দুটোই আসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।”
আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হলেও সম্প্রতি এক রিপোর্টে দেখা গেছে গণিত এবং বিজ্ঞানে আমেরিকার হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ৬৪টি দেশের পরে অবস্থান করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের উপায় কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।” তিনি চীন এবং ভারতের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তাদের তুলনায় আমাদের স্কুলগুলোতে অনেক কম সময় ব্যয় করা হয় আবার স্কুল বন্ধের দিক চিন্তা করলে তাদের চেয়ে অনেক বেশী সময় আমাদের স্কুল বন্ধ থাকে।” তিনি আমেরিকার স্কুলগুলো দিনে আরো বেশী সময় ব্যয় করা উচিত বলে মনে করেন। তিনি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন।
তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির উদ্দেশ্যে বলেন, “বাংলাদেশীরা তাদের মেধা দিয়ে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার বিভিন্ন পর্যায়ে। আশা করি তাদের কর্মদক্ষতা আমেরিকার সামগ্রিক উন্নয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
হ্যানা গরডোন একটি সততার উপর প্রতিষ্ঠিত এক কর্মবীরঙ্গিনীর নাম। পারিবারিক শত প্রতিকূলের মধ্যেও তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে, হয়েছেন মানুষ গড়ার কারিগর, শিক্ষক। সময়ের পরিবর্তনে আর কালের আবর্তে তিনি হয়ত হারিয়ে যাবেন অতল গহব্বরে। কিন্তু থেকে যাবে তার আদর্শে ঘেরা ত্রিশ বছরে শিক্ষকতা জীবন, থেকে যাবে তার ব্যাতিক্রমী পাঠদান পদ্ধতি। “আমি আশা করি সামান্য হলেও হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে সাহায্য করেছি, আর তারা আমাকে এতো বেশী আনন্দ এবং উৎসাহিত করেছে যে আমার মনে হয় আমি সারা জীবনেও তাদের সে ঋণ শোধ করতে পারব না”, তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন।
চল্লিশের দশকে বর্বরোচিত নাৎসি বাহিনীর ভয়ানক তান্ডবের শিকার তার বাবা, মা, এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। “আমার মা বাবা এবং অন্যান্য চাচাচাচী এবং চাচাতো ভাই-বোনেদের সবাই নাৎসি বাহিনীর জারিকৃত অমানবিক আইনের ফলে স্কুল এবং কলেজে যাওয়া থেকে নিষিদ্ধ ছিল”, তিনি বলেন। কিন্তু মিস গরডোনের মজবুত মানুসিকতা থেকে তার বাবা—মায়ের চিত্তের পরিচয় পাওয়া যায়। সহজে হাল ছেড়ে দেবার লোক ছিলেন না তারা। গরডোনের বাবা মা জন্মস্থান পোল্যান্ড ছেড়ে চলে আসেন কানাডায়। এরপর বিভিন্ন স্থানে কাজের মাধ্যমে তার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল অবস্থায় ফিরে আসতে লাগলেন। তারা তাদের অনাগত সন্তানের জন্য টাকা-পয়সা জমাতে শুরু করলেন।
মিস গরডোন জন্ম গ্রহণ করেন নিউ জার্সির ফ্রিহোল্ড সিটিতে। এরপর তিনি স্থানীয় হাইস্কুল শেষ করে ভর্তি হন নিউ জার্সির মনক্লের স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে সাহিত্যে এবং ইতিহাসে মাস্টার্স এবং পরবর্তিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
“আমি মনে করি, যে বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হল, আমি শুনেছি আমার বাবা যখন কানাডাতে প্রথম এসে কাজ শুরু করলেন, তখন কাজের মাঝে তিনি দুপুরের খাবারের জন্য যে সময় পেতেন, তখন তিনি দোকানের পেছনের কোন স্থানে গিয়ে নীরবে একা একা বই পড়তেন আর এভাবেই তিনি নিজে নিজে লিখতে এবং পড়তে শিখেছেন।” আপনি কেন শিক্ষকতাকে আপনার পেশা হিসেবে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে আমরা চার ভাই—বোনের মধ্যে দুই জন ইতিহাসে পড়েছিলেন, ফলে আমিও সে বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম, সাথে আমার ইংরেজী ব্যাকরণের পারদর্শিতাই আমাকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমি আজ ৩০ বছর যাবত শিক্ষকতা করছি ফলে সত্যি বলতে, আমি ভুলে গেছি কিভাবে এ পথে এসেছিলাম।”
মিস গরডোন একজন ব্যতিক্রমী শিক্ষক। তাঁর ব্যাতিক্রমী পাঠ দান পদ্ধতি তাকে অন্য সব অধ্যাপক থেকে আলাদা পরিচয়ে পরিচিত করে। যেহেতু তিনি রাইটিং এর অধ্যাপক, তিনি তার ছাত্রছাত্রীদেরকে গতানুগতিকভাবে কোন বিষয় নির্ধারণ না করে দিয়ে যেকোন বিষয়ে লেখার অনুমতি দেন। ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের লেখনীধারাকে ত্বরাণ্বিত করতে পারে। আশ্চর্য্যজনকভাবে, তিনি পাঠদানকালে যদি ভুলবশতঃ কিছু লিখে ফেলেন বা কোন কিছু করেন, তিনি নিজেকে এক ডলার জরিমানা করেন। “আর সেই টাকা আমি ছাত্রছাত্রীদেরকে আটলান্টিক সিটিতে বিনোদনের জন্য খরচ করতে দিই না, বরং সেই টাকা দিয়ে আমি তাদের জন্য লেখাপড়া সহায়ক বিভিন্ন বস্তুু যেমন ঈনডেক্স কার্ড, কলম, বই ইত্যাদি দিয়ে থাকি”, তিনি বলেন। তার প্রদত্ত গ্রেডে যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী সন্তুষ্ট না হয় তবে তিনি ছাত্র-ছাত্রীকে অন্য সব শিক্ষার্থীদের জন্য সেই পেপারের একটি করে কপি আনতে বলেন এবং সবাই মিলে আবার গ্রেডিং করার সুযোগ দেন।“আমি যদি কাউকে সে গ্রেড দিই এবং ক্লাস যদি তাকে এফ গ্রেড দেয় তবে আমার দেওয়া সি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। অপর পক্ষে, আমি যদি কাউকে সি দিই এবং ক্লাস তাকে এ দেয়, তবে সেই এ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সব সময় সর্বোচ্চ গ্রেডকে আমি প্রাধান্য দিই।”
আদর্শ শিক্ষাদানকে কিভাবে সঙ্গায়িত করা যায়? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষক সরাসরি কিছু না শিখিয়ে বরং বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীকে নিজে থেকে শেখার ব্যবস্থা করা হল সবচেয়ে ভালো শিক্ষাদান পদ্ধতি। আমি কিন্তু আসলে কাউকেই কিছু সরাসরি শেখায় না। কারণ আমি মনে করি শিক্ষা দেওয়া এবং শিক্ষা নেওয়া এ দুটোই আসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।”
আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হলেও সম্প্রতি এক রিপোর্টে দেখা গেছে গণিত এবং বিজ্ঞানে আমেরিকার হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ৬৪টি দেশের পরে অবস্থান করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের উপায় কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।” তিনি চীন এবং ভারতের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তাদের তুলনায় আমাদের স্কুলগুলোতে অনেক কম সময় ব্যয় করা হয় আবার স্কুল বন্ধের দিক চিন্তা করলে তাদের চেয়ে অনেক বেশী সময় আমাদের স্কুল বন্ধ থাকে।” তিনি আমেরিকার স্কুলগুলো দিনে আরো বেশী সময় ব্যয় করা উচিত বলে মনে করেন। তিনি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন।
তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির উদ্দেশ্যে বলেন, “বাংলাদেশীরা তাদের মেধা দিয়ে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার বিভিন্ন পর্যায়ে। আশা করি তাদের কর্মদক্ষতা আমেরিকার সামগ্রিক উন্নয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
হ্যানা গরডোন একটি সততার উপর প্রতিষ্ঠিত এক কর্মবীরঙ্গিনীর নাম। পারিবারিক শত প্রতিকূলের মধ্যেও তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে, হয়েছেন মানুষ গড়ার কারিগর, শিক্ষক। সময়ের পরিবর্তনে আর কালের আবর্তে তিনি হয়ত হারিয়ে যাবেন অতল গহব্বরে। কিন্তু থেকে যাবে তার আদর্শে ঘেরা ত্রিশ বছরে শিক্ষকতা জীবন, থেকে যাবে তার ব্যাতিক্রমী পাঠদান পদ্ধতি। “আমি আশা করি সামান্য হলেও হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে সাহায্য করেছি, আর তারা আমাকে এতো বেশী আনন্দ এবং উৎসাহিত করেছে যে আমার মনে হয় আমি সারা জীবনেও তাদের সে ঋণ শোধ করতে পারব না”, তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন।
বন্ধুত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ভারতকে এর বেশী আর কি করতে হবে ?
“ধরণীর এক কোণে
বাঁধিব আপন মনে,
ধন নয়,মান নয়,
এতটুকু ভালবাসা,করেছিনু আশা”__
এমনি কতশত ভালবাসা, কতশত তমাল-তরু,বন লতাপাতার ন্যায় বেয়ে ওঠা লকলকে ভালবাসা শুকিয়ে গেছে অকালে।যে আধকুঁড়ি ফুল ফুঁটতে গিয়েও ফুঁটতে পারল না, শুধু আর্তনাদ আর হাহাকারেই বুক ভাসাল--- হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় বি এস এফের দ্বারা সংঘটিত মধ্যযুগীয় বর্বর ও নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার নিষ্পাপ কিশোরী ফেলানীর কথাই বলছি।বাংলা সাহিত্যের কীংবদন্তী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হৃদয় নিঃসৃ্ত বিখ্যাত ছোট গল্প “হৈমন্তি”র বাস্তব নামান্তর যেন ফেলানী যেখানে মানুষের নির্মমতার কাছে হেরে গেল একটি জীবন,একটি স্বপ্ন।
পৃথিবীতে প্রায় দুইশটির মত দেশ আছে। প্রতিটি দেশের আছে একটি নির্দিষ্ট সীমানা। আর সে অর্জিত সীমানা বা ভূ-খণ্ডে সে স্বগর্বে ও বীরদর্পে দণ্ডায়মান। এতে সে দেশের সার্বভৌমত্ব সুদৃঢ় হয়, নিজেদের মধ্যে তো বটেই, বহির্বিশ্বেও।ফলে, পারস্পারিক সম্পর্কের দিক থেকে সে দেশ এগিয়ে যায় তড়িৎ গতিতে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে।পরবর্তিতে সে দেশের আবির্ভাব ঘটে একে অপরের বন্ধু রাষ্ট্র রূপে।
পক্ষান্তরে, দুই দেশের সীমান্তে এমন কিছু অনাকাংক্ষিত ও হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা ঘটে যার ফলে সেই দেশ দুটির মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।এমন ঘটনার দৃস্টান্ত স্বরূপ বলতে পারি, ফিলিস্তিন-ইজরাইল সীমান্ত, পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত এবং উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্ত এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত।
সম্প্রতি গত ৭ জানুয়ারি সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১৫ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করে মানুষরূপী নির্মম বি এস এফ হায়েনারা এবং তার লাশ কাটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল দীর্ঘ চার ঘণ্টা যাবৎ।বাংলাদেশের জনগণ তো বটেই, বলতে গেলে, সারা বিশ্ব সেদিন এই ভয়াবহ নৃশংসতা দেখে হতবাক হয়েছিল। সেদিন ফেলানীর পিতা নুর হোসেনের গগনবিদারী আর্তনাদ চরম লৌহ কঠিন পাষাণের হৃদয়কেও জয় করেছিল অনুশোচনা আর স্বান্তনাতে।বিস্ময়ে, ক্ষোভে মাতাল ছিল ১৬ কোটি বাংলাদেশী।এক ফেলানীর মৃত্যু কাঁদিয়েছে সারা বাংলাদেশকে।
ফিলিস্তিনী-ইজরাইলী সীমান্ত “কিলিং জোন” নামেই সমধিক পরিচিত। আর সেখানেও বোধ হয় এমন বর্বরতায় মানুষ হত্যা হয় না। অপর দিকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া পাশাপাশি দুটি দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবতা হল, ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বর উত্তর কোরিয়ার নিক্ষিপ্ত সেল কেড়ে নেয় দুই দক্ষিণ কোরিয়ানকে। এর ফলে সমগ্র বিশ্বব্যাপি ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।ইউরোপ, আমেরিকা সহ বিশ্বের অন্যান্য ক্ষমতাধর দেশগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায়।
ফেলানীর পিতা নুর হোসেন স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও পরাধীনতার আধারে হারিয়ে গিয়েছিলেন ক্ষণিকের জন্য,সাথে সাথে হারিয়েছেন নিজের কণ্যাকেও। কিন্তু কেন এই হারানো? কণ্যাবিয়োগের যন্ত্রনায় ছটফট করা নুর হোসেনের চোখের অশ্রুধারা কেন বার বার দেখতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে? কেন বাংলাদেশের উপর ভারত চালাচ্ছে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড? উল্লেখ্য, ভারতের সাথে চীন এবং পাকিস্তানের মত দুটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের সীমান্ত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারত সেখানে কোন প্রকার হত্যাকাণ্ড চালায় না কারণ তারা জানে কিভাবে “তেলের দাম খইলে আদায়” করতে হয়। আর তাই, প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের আচরনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, “শক্তের ভক্ত নরমের যম”
এত কিছুর পরও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের পিনপতন নীরবতা তাদেরকে শুরু থেকেই কেবল সন্দেহের মায়াজালে জড়িয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ফেলানী হত্যা কাণ্ডের মত এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়টিকে ধামা চাপা দেবার অপচেষ্টা করছে দেশবিরোধী এবং স্বার্থান্বেষী কিছু মহল।তাই আসুন সীমান্ত সন্ত্রাস মোকাবেলায় সকলে এক হয়ে কাজ করি।
মামুন হাসান
[email protected]
646-341-7219
Brooklyn,
New York.
মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত
“ফ্রি ফ্রি মিডল ইস্ট, ফ্রি ফ্রি ইজেপ্ট”—এমনই হাজারো শ্লোগানে মুখর ছিল জাতি সংঘ ভবনের সম্মুখ প্রান্ত। গত ২৯ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের ফার্স্ট এভিনিউ এবং ফোরটি ফোর স্ট্রিট সংলগ্ন স্থানে মিশরীয় আমেরিকানদের আয়োজনে মিশরে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা এবং স্বৈরাচারী শাষক হোসনি মুবারকের পদত্যাগের দাবীতে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আমেরিকায় বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণীর মিশরীয়রা সরকার বিরোধী ব্যানার, ফেস্টুন,কার্টুন,পোস্টার হাতে উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রায় তিন হাজার মানুষের আগমন ঘটে।
মূলতঃ মার্কিন কুটনৈতিক আগ্রাসনের শিকার মিশরের দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা এবং বেকারত্বের প্রভাব মিশর বাসীর কাছে তা এক ভয়াবহতার নাম। এমতাবস্থায়, মার্কিন পক্ষপাতদুষ্ট হোসনি মুবারকের অসহনীয় স্বৈরাচারী শাষন তন্ত্র ৮২ মিলিয়ন মিশরবাসীর দীর্ঘদিন যাবৎ কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা দিয়ে আসছে। আর তাই বিক্ষুব্ধ মিশর বাসী গড়ে তুলল প্রতিরোধের বাধ, আর সেই বাধ আরব ভু-খণ্ড পেরিয়ে ক্ষোদ আমেরিকায় পৌঁচেছে। আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার আরেক স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বেন আলী’র দেশ ত্যাগ এবং পলায়ন রাতারাতি মিশর বাসীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে অধিকার আন্দোলন করে আদায় করে নিতে হয়। উল্লেখ্য ইজরাইলের পর মিশর হল দ্বিতীয় দেশ যারা মার্কিন সাহায্য পুষ্ট। প্রসঙ্গতঃ ইজরাইল চাঁদের কলঙ্কের ন্যায় পবিত্র আরব ভূমিতে মার্কিন সহায়তাপুষ্ট এক ক্ষুদ্র অথচ একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে মধ্য প্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান মদদদাতা। আর ইজরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনজামিন নেতানিয়াহু (১৯৯৬-১৯৯৯), এহুদ বারাক (১৯৯৯-২০০১), এরিএল শ্যারন (২০০১-২০০৬) এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট এহুদ ওলমার্ট-এর মত ইসলাম বিদ্বেষীর অনুকরণে মার্কিন ষড়যন্ত্রের ফলস্বরুপ, হোসনে মুবারককেও একই আসনে বসানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশরের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবে খুব কাছের মনে হলেও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাষণে তার পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। তিনি গত শুক্র বার এক ভাষণে বলেন, “অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে মিশরের সাথে আমেরিকার এক গভীর এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান এবং আমরা অন্যান্য সকল দ্বি-পাক্ষিক বিষয়ে একে অপরের সহযোগিতা করে আসছি।“- কাঠামো গত দিক থেকে মিশর আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্র রুপে পরিগনিত হলেও আর্থিক দিক থেকে মিশর কিছুটা আমেরিকার কাছে কোণঠাসা। কিন্তু আমেরিকা এবং হোসনি মুবারকের সকল ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আজ সাধারণ মিশর বাসীর নখ দর্পনে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী আলী জাবের নামক এক মিশরীয় বলেন, “মিশরের মত একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিগত কয়েক দশক ধরে স্বৈরাচারী শাষণ প্রতিষ্ঠার পেছনে ক্ষোদ আমেরিকার একটি বড় হাত রয়েছে যদিও আমেরিকা নিজেই একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে প্রচার করে আসছে।“
সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত।কালে কালে যুগে যুগে এটাই প্রমাণিত হয়েছে বার বার। বিজয় এসেছে গরীব মেহনতি নির্যাতিত মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের।তাই তো জনতার আন্দোলনে আন্দোলিত হয়েছে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলী’র মত ডিকটেটরেরা।কালের পরিক্রমায় ও সময়ের আবর্তে হোসনি মুবারকও হারিয়ে যাবে কালের গহীন অতল গহব্বরে। অদূর ভবিষ্যতে মিশর সকল প্রকার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক হানাহানির উর্ধে থেকে এবং সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের ভেদ উচ্ছেদ করে একটি ইসলামী গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে একবিংশ শতাব্দিতে আবারো বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।
মামুন হাসান
[email protected]
আমেরিকার শ্রেষ্ঠ মাতা
মূলঃ এলিজাবেথ কোলবার্ট
অনুবাদঃ মামুন হাসান
“Call Me Garbage”
বিখ্যাত লেখিকা এমি চুয়ার “ব্যাটেল হিমন অফ দ্যা টাইগার মাদার” নামক উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসবে একদিন সন্ধ্যায় আমি এবং আমার পরিবারের সবাই মিলে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। বইটি প্রকাশ করে “পেঙ্গুইন প্রেস” এবং বইটির মূল্য নির্ধারিত হয় ২৫.৯৫ ইউএস ডলার। আমার বারো বছরের জমজ দুই সন্তান তাদের শিক্ষকের সহায়তায় উক্ত বইটির কিছু অংশ পড়ে ফেলেছে। সেই শিক্ষক ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক । আর তিনি এ বইটি পেয়েছেন তার এক সহকর্মীর কাছ থেকে, সেই ব্যক্তিকে বইটি দিয়েছিল তার বোন এবং তার বোন বইটি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ই-মেইলে পেয়েছিল। যাই হোক, আসল কথায় আসি। বইটির কিছু অংশ ‘ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে’ শিরোনাম হিসেবে আসে এবং সেই শিরোনামটি ছিল,’কেন চাইনিজ মায়েরা শ্রেষ্ঠ?’ অতীতেও ছিল এবং এখনো আছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইন্টারনেটে একজন ব্লগার চাইনিজ মায়েদের ‘এন্ড্রোমেডার প্রসারণের ফলে সৃষ্ট রোগাক্রান্ত মানুসিকতা’ বলে অভিহিত করেন। কিছু দিনের মধ্যেই সেই ব্লগে মিস চুয়ার প্রকাশিত বইটি সম্বন্ধে প্রায় পাঁচ হাজার মন্তব্য প্রকাশ পায়। এরপর ‘টাইগার মাদার’ বা ‘বাঘিনী মা’ব্যাপক সংখ্যক মন্তব্যের ভিত্তিতে ইন্টারনেট কোম্পানী ‘এমাজোন ডট কম’ এর জরীপে চার নম্বর স্থান দখল করে। তাঁর লেখা বইটি বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলার পর মিস চুয়া আমেরিকার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) এর ‘সবকিছু বিবেচনায়’ নামক অনুষ্ঠানে এবং এনবিসি টেলিভিশনের রাতের খবরে ও ‘টুডে’ নামক সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। গত সপ্তাহ জুড়ে ‘সানডে টাইমস’পত্রিকায় প্রথম দুই কলামে মিস চুয়ার বইটির বিশ্লেষন্ধর্মী আলোচনা হয়েছিল, সাথে সাথে অনেকটা নিরপেক্ষভাবে শিরোনাম করা হয়েছিল,’অধিক মাত্রায় শাসন সন্তানের চরিত্র এবং স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে কি তেমন কার্যকরী?’ এছাড়াও বেশ কিছু পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণেও এ বিষয় নিয়ে ব্যাপক ভাবেই আলোচনা করা হয়।
আমি ‘মিডিয়া ব্লিটিজ’ কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ তাদের সুবাদেই আজ ‘টাইগার মাদার বা বাঘিনী মা’ এখন সকলের মুখে মুখে । তারা প্রথম এ বিষয়টি মানুষের সামনে ব্যাপক কলেবরে নিয়ে আসেন। মিস চুয়া একজন চাইনিজ অভিবাসী পিতার কন্যা এবং তিনি বিখ্যাত ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র আইন বিভাগের অধ্যাপিকা। তিনি ঐ একই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অন্য আরেক জন অধ্যাপককে বিয়ে করেন, তাদের দুইটি মেয়ে সন্তান আছে যাদেরকে তিনি বেশ শক্ত হাতেই প্রতিপালন করছেন। মিস চুয়া তার কন্যাদের জন্য প্রাত্যহিক জীবন যাপনে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করে দিয়েছেন, সেগুলো হলঃ বাসায় কোন মেহমান এলে অথবা কোন মেহমানের বাসায় গেলে সেখানে সারা রাত জেগে গল্প করা বা অন্য কোন কারনে জেগে থাকা যাবে না; কোন প্রকার খেলাধুলা করা যাবে না; রিপোর্ট কার্ডে সকল সাবজেক্টে গ্রেড লেভেল A এর নিচে আসা আসা যাবে না;পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য বিনোদনমুলক কাজগুলো নিজের পছন্দ অনুযায়ী করা যাবে না।
মিস চুয়ার যুগ্ম পৃথিবীতে কেবল মাত্র দুই ধরণের মাতৃ্ত্বের প্রকাশ পায় আর তা হল ‘চাইনিজ মাতা’ এবং ‘পশ্চিমা মাতা ’ প্রথমতঃ চাইনিজ মা, যিনি নাকি তার বাচ্চাদের বিনোদনমূলক ঐ সকল খেলাধুলার অনুমতি দেয় কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চাইনিজ মা হবার তেমন প্রয়োজনিয়তা দেখেন না। তিনি তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন,” আমি চাইনিজ মায়েদের সন্তান প্রতিপালনের কৌশল তেমন শক্তভাবে পালন করছি না।“ এর পর দ্বিতীয়তঃ পশ্চিমা বিশ্বের মা, যারা মনে করেন তাদের সন্তান প্রতিদিন আধা ঘন্টা খেলাধুলা করলেই তাদের বিনোদনের চাহিদা পূরণে তা যথেষ্ট। কিন্তু অন্য দিকে চাইনিজ মায়েদের প্রথম কাজটা বেশ সহজ ব্যাপার। মিস চুয়া তার কন্যাদ্বয়ের জন্য দুইটি বাদ্যযন্ত্র পছন্দ করলেন। বড় মেয়ে সোফিয়ার জন্য পিয়ানো এবং ছোট মেয়ে লুলুর জন্য ভায়োলিন। তাদের ভায়োলিন এবং পিয়ানো বাজানোর সময় মিস চুয়া তাদের পাশে একটানা বসে থাকতেন । কখন কখন তা এক বা দুই ঘন্টা পেরিয়ে চার বা পাঁচ ঘন্টা হয়ে যেত! এমন ভাবে অনুশীলন করাতেন যেন তাদের দুই বোনকে কার্নেগী হলের মত একটি বিখ্যাত এবং নামী দামী সংগীতালয়ে পড়তে যেতে হবে! আশ্চর্যজনকভাবে, সেটা বাস্তবেও এসেছিল! সোফিয়া পরবর্তিতে ঠিকই কার্নেগী হলে সংগীত শেখার সুযোগ পেয়েছিল। মিস চুয়ার কন্যাদ্বয় সংগীত শাস্ত্র তো বটেই, পড়াশোনাতেও বেশ সফল, কিন্তু—একবার পরাজিত হতে হয়েছিল সোফিয়ার। স্কুলের গুন অংক প্রতিযোগিতায় এক কোরিয়ান বালকের কাছে হেরেছিল সোফিয়া। এই একটি বারই মাত্র। এর পর অবশ্য সোফিয়া আর কোন দিন কারো কাছে হারে নি। পরবর্তিতে মিস চুয়া তার নিজস্ব যুক্তি মতে,” পশ্চিমা মায়েরা পরাজিত (সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে)” বেশ ভাল ভাবেই মনে রেখে তাঁর বইয়ে এ বিষয়ে বিষদ আলোচনা করেছেন।
মিস চুয়া তাঁর বইয়ে একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আর তা হল যে, “ নিজেকে নিয়ে ব্যাংগ করা” বা নিজের সাথে কৌতুক বা হাসি –ঠাট্টা করা। তিনি সবচেয়ে যে বিষয়টিকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন তা হল, বাচ্চাদের বেয়াদবি করা এবং পিতা মাতার কথা না শোনা। তিনি তার বইয়ে তার বাস্তব জীবনের অনেক ঘটনা বেশ চমকপ্রদ ভাবে তুলে ধরেছেন। বইয়ের বেশীর ভাগ অধ্যায়গুলো মোটামুটি চার থেকে পাঁচ পৃষ্ঠায় শেষ, আর এ সমস্ত অধ্যায়ে তিনি তার জীবনের অপরিচিত হাস্যোজ্জ্বল মুখের বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন,” আমি এটা চাই না, আমি এর চেয়ে আরো ভাল তা চাই।“ –বলেই বড় মেয়ে সোফিয়ার নিজ হাতে বানানো জন্ম দিনের কার্ডটি ছুড়ে ফেলে দিলেন তিনি।
অপর এক অধ্যায়ে মিস চুয়া লিখেছেন যে, “ দ্যা লিটল হোয়াইট ডানকি” নামক ছড়াটি পড়তে না পারার অপরাধে তিনি তার কন্যাদ্বয়ের কাছ থেকে তাদের পুতুল কেড়ে নেবার হুমকি দেন এবং তাতেও যদি কাজ না হত তাহলে দুপুরের অথবা রাতের খাবার তাদেরকে বেশ দেরীতে পরিবেশন করতেন। কোন কোন সময় এক ধরণের অপরাধের পাপমোচন স্বরুপ দুই অথবা তিন বছর যাবৎ তাদের জন্মদিন পালন করা হত না আর এ ঘটনার অবতারণা হয় যখন তার বাচ্চাদের প্রত্যেকের বয়স সাত বছর ছিল। তৃ্তীয় অধ্যায়ে মিস চুয়া সোফিয়াকে “আবর্জনা” বলে গালি দিয়েছেন। এমনকি চুয়ার নিজের পিতা অতীতে একসময় মিস চুয়াকেও “আবর্জনা” বলেছিল। এরপর তিনি নিজে নিজে অনুধাবন করলেন যে, এটা বলে গালি দেয়া সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী এবং কার্যকরী উপায়। মিস চুয়া সেই ডিনার পার্টিতে এ সমস্ত বিষয় গুলো আলোচনা করছিলেন এমন সময় অতিথিদের মধ্যে এক ভদ্র মহিলা ভীষণ মনক্ষুন্ন হলেন এবং এক পর্যায়ে সেই মহিলা কেঁদে ফেললেন। এমতাবস্থায়, উপস্থিত সকল অতিথিরা করতালির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকুলে আনতে চাচ্ছিলেন কারণ স্বয়ং মিস চুয়াও কিছুটা ভারাক্রান্ত ছিলেন এবং তিনি কিছু সময়ের জন্য আক্ষরিক অর্থে কোন কথা বলতে পারছিলেন না।
হঠাৎ সভার এক অতিথি সরাসরি মিস চুয়া কে প্রশ্ন করলেন, “আপনি তো নিশ্চয় সত্যিকার অর্থে সোফিয়াকে আবর্জনা বলে গালি দেন নি, তাই না?” কিন্তু উত্তরে মিস চুয়া বললেন,” হ্যাঁ, আমি সত্যি সত্যিই তাকে আবর্জনা বলেছি।“
যখন ডিনার পার্টির অধ্যায়টা ক্লাসে পড়ানো হচ্ছিল আমার ছেলেদের কাছে বেশ আশ্চর্য্যজনক মনে হয়েছিল যার কারনে তারা আমাকে খুব ক্ষেপায় এবং বলে,” আমাকে আবর্জনা বলে ডেকেই দেখ না।“
যদি মিস চুয়ার বক্তব্যে কিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয় থাকে অথবা নাও থাকে তারপরও একে নীতিবাক্যমূলক গল্পের সাথে তুলনা করা যায়। মিস চুয়া তার বইয়ে নিজেকে “বাঘিনী” বলেছেন কারন চাইনিজ পঞ্জিকা অনুযায়ী মিস চুয়া জন্মেছিলেন “বাঘ” নামক একটি বছরে। তিনি বলেন, তার মত যারা বাঘ নামক বছরে জন্ম গ্রহণ করে তারা নাকি অনেক শক্তি শালী , দায়িত্যবান এবং আকর্ষণীয় হয়। তিনি আরো বলেন যে, জঙ্গলে একটি বাঘ তার চার হার পা দিয়ে চলার সময় যেমন চারদিকে এক প্রকার ত্রাস বা ভীতি সঞ্চার করে যায় তেমনি তিনিও তার সন্তানদের প্রতি প্রত্যক্ষ প্রভাবক হিসেবে বিদ্যমান।
কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রকৃ্ত পক্ষে “এশিয়ার বাঘ” চীনের কথা উক্ত বইয়ে তেমন গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয় নি। তারপরও এ বিষয়টি সহজেই অনুমেয় যে একটু একটু করে মন্থর গতিতে চলা চীন আজ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আকাশ্চুম্বী অট্টালিকায় অবস্থান করছে।
বাস্তবিক বিবেচনায় এখনকার দিনে পত্রিকা খুব কম মানুষ দোকান থেকে কিনে। ইনটারনেট আর তথ্য প্রযুক্তির সুবিধার্থে সেগুলো হাতের এক ক্লিকের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। আর এখন পত্রিকা খুললেই তো এশিয়ার বাঘ চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির কথা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। বিভিন্ন পত্রিকা বিভিন্ন শিরোনামে ভরপুর থাকে যেমনঃ সোলার প্যানেল প্রস্তুত কোম্পানী চীনে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমেরিকার তথ্য প্রযুক্তির প্রধান কমিশনারের বাড়ি চীনে, অথবা আইবিএম কোম্পানী আমেরিকার পাঁচ হাজার কর্মীকে ছাটায় করে ভারতে স্থানান্তরিত হয়েছে। সেখানে কলকারখানা, তথ্য প্রযুক্তি এমনকি সাংবাদিকতা ক্ষেত্রেও কর্মের প্রসারন ঘটেছে।
যখন আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল তখন আমরা নিজেদের ভিতর আলোচনা করতাম যে, আমেরিকান বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। তবে এটা সহজেই প্রতীয়মান যে, বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি এখন অনেক এগিয়ে। যে সমস্ত দেশ বৈদেশিক বাণিজ্য সহ উদার পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী তারাই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত। আর তথ্য প্রযুক্তিতে বিশ্বের অগ্রগতির কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন চার-পাঁচ বছরের বাচ্চারাও জানে কিভাবে ইউটিউব থেকে পছন্দের ভিডিও ডাউনলোড করতে হয়। শুধু তাই নয়, ফটশপে নিজের ছবি বিখ্যাত কোন ব্যক্তির ছবির সাথে জোড়া লাগান, অথবা ই-মেইলে বন্ধুকে ম্যাসেজ পাঠানো ,আই-পডে গান শোনা এগুলো তাদের কাছে অনেকটা মামুলি ব্যাপার।
হ্যাঁ, আপনি আপনার বাচ্চাকে পিয়ানো শেখাতেই পারেন সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আপনি সেটা অন্যায় ভাবে এবং জোর পূর্বক করবেন কেন? “এভাবে বাচ্চাদের শাসন করে আপনি তো তাদেরকে জিমি হেন্ড্রিক্স (আমেরিকান সংগীতের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত গিটারিস্ট, শিল্পী) বানাতে পারবেন না”- ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত সংবাদের মন্তব্য স্বরূপ এমনটাই বলেছিলেন হাজার হাজার আমেরিকান অভিভাবক।
একজন আমেরিকান মা হিসেবে চরম ব্যাথায় ব্যথিত হই যখন শুনি আমার মতো আরেকজন মা, মিস চুয়া তার সন্তানকে “ময়লা আবর্জনা” বলে গালি দিতে পিছপা হন না। প্রোগ্রাম অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এসেসমেন্ট (পি আই সি এ) এর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে মেধা নির্ণয়ের একটি পরীক্ষায় চীনের শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান অধিকার করেছে যারা প্রথম বারের মতো ঐ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল। সাংহাই থেকে আগত কিছু ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজী, গণিত সহ সব বিষয়েই ভাল করেছে। পক্ষান্তরে, আমেরিকান শিক্ষার্থীরা রিডিংএ সতের তম, বিজ্ঞান বিষয়ে তেইশ তম এবং গণিতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে পঁয়ত্রিশ তম স্থান দখল করেছে। চূড়ান্ত ফলাফলে মার্কিনীরা কেবল চীন অথবা কোরিয়ার পেছনেই নয়, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, শ্লোভানিয়া ইস্তনিয়া পোল্যান্ড সহ বেশ কিছু দেশ আমেরিকাকে পেছনে ফেলে নিজ নিজ অবস্থানে রয়েছে। আমি জানি, অনেকেই ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে চাইবেন না। পুনরায় তদন্তের দাবী জানাবেন। কিন্তু ধরে নিলাম তাদের প্রতিবেদনটি সত্য এবং নির্ভুল। আমেরিকার সেক্রেটারী অফ এডুকেশন মিং আনি ডুঙ্কান নিউ ইয়র্ক টাইমস কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ যুক্তরাষ্ট্র প্রায় প্রতিটি বিষয়েই তেইশ অথবা চব্বিশ তম স্থানে আছে। আমরা তাদের ফলাফলকে সঠিক মূল্যায়ন বলতে পারি অথবা সরাসরি অস্বীকার করতে পারি এই নিষ্ঠুর সত্যকে, কিন্তু আসল কথা হল, এটা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমরা প্রকৃ্ত শিক্ষা থেকে কত দূরে সরে যাচ্ছি”।
কিন্তু কেন এমন হল? কিভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র তার বাচ্চাদের শেখাতে পারে না কেমন করে পড়তে হয় অথবা ভগ্নাংশের গুন করতে হয়। মিস চুয়ার বর্ণনাকে যদি একটি রূপকথার গল্প হিসেবেও ধরা হয় তারপরও কন্যাদ্বয়ের প্রতি তার কটাক্ষ এবং অপরিমিত শাসন বাচ্চাদের মনে অশান্তিকর পরিস্থিতির অবতারণা ঘটায়। আমেরিকান মায়েদের সব সময় সব ক্ষেত্রে তাদের বাচ্চাদের উৎসাহ প্রদান করার কথা বলা হয়। আর এভাবেই দিনে দিনে বাচ্চারা নিজের প্রতি এবং একে অপরের প্রতি দায়িত্যশীলতার পরিচয় দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে। আর এ সকল নিয়ম অনুসরণ করে আমরা বিগত দিন গুলোতে বেশ ভাল এবং আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছি। মজার বিষয় হচ্ছে, শুধু একটি বিষয়ে আমেরিকান বাচ্চারা সকলকে পরাজিত করতে পারবে আর তা হল আত্ম সম্মানবোধ। ব্রুকিং ইনস্টিটিউশন এর একদল গবেষক আমেরিকান ছাত্র-ছাত্রীদের নিম্ন স্কুল থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত রিডিং, রাইটিং, স্যোসাল সাইন্স প্রভৃতি বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের সাথে শুধু গণিতে প্রাপ্ত নম্বরের তুলনামূলক গবেষনা করেন এবং তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকার অন্তত চল্লিশ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী এক বাক্যে স্বীকার করেছে যে, তারা সাধারণত গণিতে ভাল করে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র সাত ভাগ স্টুডেন্ট শতভাগ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়, এবং তাদেরকেই অন্যান্য শিক্ষার্থী অপেক্ষা অগ্রগামী এবং মেধাবী বলে ধরে নেয়া হয়। সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা আঠার ভাগ বলেছে তারা সব সময় গণিতে ভাল নম্বর পেয়ে আসছে। তাদের মধ্যে চুয়াল্লিশ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী অপেক্ষা ভাল এবং মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।। ব্রুকিং গবেষক দল আরো বলেছেন,” তুলনামূলকভাবে, সিঙ্গাপুরের সর্ব নিম্ন মেধাবী শিক্ষার্থী এবং আমেরিকার সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থী সম পর্যায়ের! আপনি হয় তো ভাবতে পারেন, উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুরের কিছুটা মনোকষ্ট থাকতে কারণ চীন তাদের অপেক্ষা অনেক ভাল করেছে, কিন্তু আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, আর কিছুতে না হোক অন্ততঃ গণিতে সিঙ্গাপুর তাদের পারদর্শিতা দেখিয়েছে।
আমাদের এই সকল সমস্যাগুলোকে একটি সামাজিক বা দেশীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে কেবল পিতা মাতা বা শিক্ষকদের সমাধান করা সম্ভব নয়।এর জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে একাগ্রতার সাথে সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এক আমেরিকান অভিভাবক ইনটারনেট ব্লগে বলেছেন, “For some time now, the U.S has, in effect, been drawing crappy, smiley-face birth day cards and calling them wonderful. It made us feel a bit better about ourselves without improving the basic situation.” পি আই এস এ প্রদত্ত ফলাফলের ভিত্তিতে চায়নার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে এবং তার শিরোনাম ছিল, “ গণিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা-এটাই বাস্তবতা”
মিস চুয়ার বইটিব্যাপক আকারে পাঠক সমাদ্রিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তার পরও বহু সংখ্যক মায়েরা মিস চুয়ার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে “টাইগার মাদার” বা “বাঘিনী মা” হবার প্রয়াস পাবেন। ইন্টারনেটে মিস চুয়ার বিপক্ষে যে অসংখ্য মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তার অধিকাংশ ছিল পশ্চিমা আবেগ প্রবণ এবং ব্যথিত পিতা মাতার পাঠানো। উদাহরণস্বরূপঃ লং আইল্যান্ড থেকে এক মাতা লিখেছেন, “ মিস চুয়া একজন শুশুক মাতা” আবার আরেক জন একটু গভীরে গিয়ে মিস চুয়াকে সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুর ও অন্যায় আচারনের জন্য বন্দী করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। “ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল” এর ব্লগে কিছু এশিয়ান আমেরিকান মায়েদের মন্তব্যও প্রকাশিত হয়েছিল। “মিস চুয়ার মত অভিভাবককে দেখলে সহজেই বুঝা যায় কেন আমার মত এশিয়ান আমেরিকান মায়েরা মানুসিক চিকিৎসাধীন”—বলেছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপিকা মিস বেটি মিং লু। “তবে সামগ্রিকভাবে মিস চুয়ার জন্য সবচেয়ে নিন্দনীয় যে বিষয়টি তা হল তাঁকে নিয়ে অর্থাৎ এশিয়ান আমেরিকান মায়েদের নিয়ে মিডিয়ার বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা”—বলেছেন, ফ্রাংক চী নামক বস্টনের একজন রাজনীতিবিদ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত মিস চুয়ার আর্টকেলের মন্তব্যে সাংহাইস্থ একটি ওয়েব সাইটের একজন সংগঠক বলেন, “ আমি চায়নীজ সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছি, চায়নীজ পিতা মাতার আদর্শে বড় হয়েছি,এবং জন্ম থেকেই আমি শত শত সি পি আই (কমন প্রফেশনাল এক্সাম) গ্রাজুয়েটদের সাথে বেড়ে উঠেছি তাই এ বিষয়ে আমি কিছু না বলে পারছি না। আসলে ঐ সংবাদটি আমাকে রীতিমত শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলেছিল”।
মিস চুয়ার প্রকাশিত বই সম্বন্ধে করা বিভিন্ন মন্তব্যের মধ্যে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়াও হয়েছে। তার পরেও সংবাদটি আরো ব্যাপক আকারে নিউ ইয়র্ক টাইমস এর প্রধান শিরোনাম করা হয়। মিস চুয়া তার বইয়ের প্রকাশনা পরবর্তী সাক্ষাৎকারে বলেন, “ আমার বইয়ে আমি মানুষকে কিভাবে সন্তান লালন পালন করতে হয় আর নির্দেশিকা দেয় নি”—কিন্তু তার বইয়ের পিছনের কভারে লেখা আছে, “How to become a TIGER MOTHER.”
মিস চুয়ার বক্তব্য অনুসারে তাঁর বইটি হল একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। কিন্তু আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ বলতে আমরা বুঝি এমন গ্রন্থ যেখানে লেখকের সরল জীবনের কথাই উদ্ধৃত থাকবে। “ব্যাটেল হিমন অফ দ্য টাইগার মাদার” বইয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্যের যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা যায়। এটা ঝড় হাওয়ার মত হঠাৎ করে লেখা সাময়িক বিনোদনের বস্তু মাত্র। এটা অন্তরবলোকন থেকে নির্গত বস্তুনিষ্ঠ কোন আবেদন নয়। এছাড়াও মিস চুয়ার বইয়ের শেষের দিকে একটি চ্যাপ্টারে তার কনিষ্ঠ কন্যা লুলু’র জন্য তিন পৃষ্ঠার একটি ওয়ার্কশিট রেখে গেছেন যাতে সে মায়ের অনুপস্থিতিতেও সেগুলো অনুশীলন করতে পারে। একে বারে শেষের অধ্যায়ে তিনি বেশ বড় একটি তালিকা দিয়েছেন যাতে দুই কন্যা সোফিয়া (১২) এবং লুলু (৭) কে নিয়ে ঘুরে আসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত ৪০ টি শহরের নাম রয়েছে।
মিস চুয়ার স্বামী চায়নীজ নন। তিনি তার বাচ্চাদের প্রতি খুবই সদয়, উল্লেখিত বইটিতে তাকে মিস চুয়ার বিপরীত অবস্থানেই পাওয়া যায়। মিস চুয়া বলেছেন তার বইয়ে তিনি তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদ বা মনোমালিন্যের কথাও লিখেছিলেন কিন্তু পরবর্তিতে তার স্বামীর অমত পোষণের কারনে তিনি তা মুছে ফেলেন। কিন্তু তার পরও তিনি কিছু কথা তাঁর বইয়ে লিখেছেন যা তাদের স্বামী-স্ত্রীর সুমধুর সম্পর্কতে কিছুটা টানাপোড়েন হতে পারে। আর যদি তাই হয়, তবে তার দায়িত্ব মিস চুয়ার। কারন তিনি এক কথপোকথনে তার স্বামীকে বলেছিলেন, “ আমি তোমার কাছে ঘৃণার পাত্র হয়েই থাকতে চাই”।
সন্তান লালন পালন করা অনেক কষ্টকর, যারা এ পথের পথিক এ বিষয়ে তাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। সন্তানের পরাজয়ে যেমন পিতা মাতা বিষাস সিন্ধুতে পতিত হয় তেমনি সন্তানের সাফল্যে পিতা মাতার সম্মান-মর্যাদা বেড়ে হয় আকাশ্চুম্বী।সন্তানের বিফলতায় আপনি তাদের উপর মনোক্ষুন্ন হতে পারেন না বরং আপনাকে নিজের প্রতি মনোক্ষুন্ন হওয়া উচিৎ। সন্তানের অনেক কর্মকাণ্ড হয় তো ভুল পথে পরিচালিত হবে, কিন্তু সন্তানের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা বা তাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে তা ঊর্ধগামী পর্বত আরোহনের মত কঠিন হলেও কখনও তা ধৈর্য্য ধারণ এবং কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হয়। মিস চুয়া বইয়ের শেষে লিখেছেন তিনি স্বভাব গত দিক থেকে নিজেকে পরিবর্তন করতে চান। তিনি বলেন, “ I invoke all Founding Fathers. They, too, would not have approved of sleepovers, she tells her daughters.
মামুন হাসান
January 10, 2011.
New York, United States.
[email protected]